অসহায় বাবার আত্মহত্যা: পঞ্চগড়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করে দুই মামলা

ক্রাইম রিপোর্ট
মো:বাবল হোসেন পঞ্চগড় :
পঞ্চগড়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে অসহায় বাবার আত্মহত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে ঘটনাটির জন্য দায়ী করা হয়। এছাড়া এই মামলায় আসামী করা হয় আরো ৪ জনকে।
শুক্রবার রাতে পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী থানায় মামলা দুটি করেন মৃত ব্যক্তির ছেলে।
মামলায় জড়ানো ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন। আর আসামীরা হলেন- ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মন (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মন (৪৬), একই এলাকার মৃত ধনবর বর্মনের ছেলে ভবেন বর্মন (৫০) এবং অলকান্ত বর্মনের ছেলে কাজল বর্মন (২৩)।
মামলার বাদী জানান- তার কলেজ পড়ুয়া বোনকে তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন আসামী পলাশ চন্দ্র বর্মন। এঘটনার বিচার দাবি করলে বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সুরাহার আশ্বাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিন পার হলেও কোন সুরাহা করতে পারেননি তিনি। বারবার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোন বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তার বাবা (৫০)। গত বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গলায় চাঁদর পেচিয়ে বাড়ির অদুরে আবাদি জমির পাশের একটি পাকুর গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়- তার বোনকে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত পলাশ চন্দ্র বর্মন জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এতে সহযোগিতা করে অপর আসামী কাজল। পরে ভুক্তভোগির চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে পলাশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন তার বোন। চিকিৎসাধীন ছিলেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালেও। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি সুরাহার আশ্বাস দেন। পরদিন চেয়ারম্যানের কথামত আসামী কাজলের বাড়িতে বসা হয়। কিন্তু সেখানে সুরাহার পরিবর্তে মামলার বাদী এবং তার বাবাকে আসামীরা উল্টো হুমকি-ধামকি দেন। পরে চেয়ারম্যান আরো তিন-চারদিন সময় চান মিমাংসার জন্য। কিন্তু তিনি বিষয়টির গুরুত্ব না দিয়ে কালক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
মামলার বাদী বলেন, মৌখিক অভিযোগে চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতা দেখে ২৪ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেই। পরে চেয়ারম্যান আমাদের নোটিশের মাধ্যমে জানান ১ ফেব্রুয়ারী ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে। কিন্তু সেদিন খবর পাই আসামীরা উপস্থিত হবেনা। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও টালবাহানা শুরু করেন। বিচার না পাবার আশঙ্কায় আমার বাবা ভেঙে পড়েন। এদিকে, পরিষদে অভিযোগ দেয়ায় পলাশের বাবা শ্যামল এবং আসামী ভবেন আমার বাবাকে তাচ্ছিল্য করেন এবং বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন।
তিনি বলেন, আমার বাবা বাড়ি এসেই কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে রাতে সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেন। একাধিকবার বলার পরেও চেয়ারম্যান ন্যায় বিচার করেননি বলেই আমার বাবা বিচার না পাবার আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু আটোয়ারী থানা এলাকায় বাবার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল, এজন্য আটোয়ারী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করেছি। আর সদর থানায় করেছি বোনের ধর্ষণের বিষয়ে। 
এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন। তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়ে উভয়পক্ষকে নোটিশ করেছি। গত ১ ফেব্রুয়ারি বসার কথা ছিলো। কিন্তু অভিযোগকারিরাই আসেননি। না আসলে কিভাবে সুরাহা করবো? আর আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তবে কেন আত্মহত্যা করেছে তা জানিনা।
পৃথক দুই মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী থানার ওসি সোহেল রানা এবং সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *