বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুরিয়ার জামগড়ায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী তাজিবুল মীর (৩১) হত্যা মামলার ৩নং আসামী মোঃ শামীমকে বরিশাল বিভাগের ভোলা থেকে গ্রেফতার করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশের চৌকস একটি দল।
জানা গেছে, উক্ত মামলার ১নং আসামী সুমন মীর (৩০) উচ্চ আদালত থেকে ৪ সপ্তাহের জামিনে আসছেন। এ মামলার ২নং আসামী মোঃ হিরা মিয়া (৩০), ৩নং আসামী মোঃ শামীম (৩০), ৪নং আসামী মোঃ সুমন মিয়া (২৮) পলাতক থাকেন। র্যাবের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তি ও ছায়া তদন্তের মাধ্যমে আশুলিয়া থানার চৌকস পুলিশ অফিসার (এসআই) নোমান ছিদ্দিক অভিযান চালিয়ে বরিশালের ভোলা এলাকা থেকে উক্ত মামলার ৩নং আসামী শামীমকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ জানায়, গত (৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং) সন্ধ্যায় উল্লেখ্য আসামীদের যোগসাজসে ৫-৬জন ভাই বন্ধু নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, এসময় তাজিবুল মীর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রæত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, এরপর ভিকটিম তাজিবুল মীরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ২১দিন, এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাজিবুল মীরের মৃত্যু ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর মীর বাড়ির মৃত সফুর উদ্দিন মীরের ছেলে মোঃ ওয়াহিদ মীর (৬০), ভিকটিম তাজিবুল মীরের বাবা বাদী হয়ে উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল সাকিনস্থ ৪নং বিবাদীর অফিসের ভিতর, ভাদাইল, আশুলিয়া, ঢাকা। ৬ জানুয়ারি ২০২৩, সন্ধ্যা অনুমান ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে মদ খাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাই বন্ধু ব্যবসায়ীদের সাথে তাজিবুল মীরের মিটিং হয়, সেই মিটিং শেষে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য (মদ) সেবন করেন ৫-৬জন, অন্য কারো সমস্যা না হলেও তাজিবুল মীর অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে সুমন মিয়াকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি, সুমন মিয়ার বাবা মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, এই ঘটনার পর থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি অনেকবার ছেলের সাথে কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিনা। এদিকে ভিকটিম তাজিবুল মীরের খালাতো ভাই মোঃ রনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি সুমন মিয়ার অফিসে গিয়ে ৬-৭জনকে পেয়েছি, সেখানে দুইটি বিদেশী মদের বোতল দেখতে পেয়েছি, সেই দুই বোতলের মধ্যে এক বোতল পুরো খালি ছিলো আর এক বোতলের অর্ধেকটা ছিলো, তাজিবুল মীর ভাইয়ের চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছিলো না এমন কথা বলছিলো, অনেকেই বলছেন বিষয়টি রহস্যজনক।
উক্ত মামলার বাদী মোঃ ওয়াহিদ মীর বলেন, আমার বড় ছেলে তাজিবুল মীরের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমার ছেলের খালাতো ভাই রনি যাদেরকে চিনতে পেরেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি, এদিকে আমার ছেলে মৃত্যুর মুখে আর আমার ছেলের ইন্টারনেট ব্যবসা দখলের চেষ্টা করে প্রায় ৪০টি সংযোগ কেটেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মোর্শেদ ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ মারুফ আলী ভুঁইয়া (২৬)। তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে কারো কোনো বিবাদ নেই, শুধু ছেলেটা নেটের ব্যবসা করতো, আমার জীবনে অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদেরকে বড় করেছি, আমার তাজিবুল মীরের ১১ বছরের একটি মেয়ে ও ১৪ মাস বয়সের একটি অবুঝ শিশু ছেলে রয়েছে, আমার ছেলের মৃত্যুর কারণ কি? এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের কাছে আবেদন, এ ব্যাপারে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আটক করাসহ তাদের কঠিন শাস্তি চাই, আর যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত না-তাদেরকে যেন হয়রানি না করা হয় এটা আমার সবার কাছে অনুরোধ।
আশুলিয়া থানার (এসআই) নোমান ছিদ্দিক বলেন, আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল (মধ্যপাড়া) এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া’র অফিসে গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে তাজিবুল মীরকে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করার ঘটনা ঘটে, এ অপরাধে আশুলিয়া থানায় ভিকটিমের বাবা ওয়াহিদ মীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন, এই মামলার সাথে জড়িতদের মধ্যে শামীম নামের একজন আসামীকে বরিশালের ভোলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তাকে ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শনিবার থেকে তার রিমান্ড শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে এই পুলিশ অফিসার জানান। তিনি আরো বলেন, এ মামলার ১নং আসামী সুমন মীর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আসছেন। তিনি আরো বলেন, এটি হত্যা মামলা, ৩০২ ধারা যোগ হয়েছে। অপরাধী সে যেইহোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
