আশুলিয়ায় শ্রমিক নেতা সারোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগ

ক্রাইম রিপোর্ট

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন শিমুলতলা মীরবাড়ী স্টরী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর শ্রমিক গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার আমতলী এলাকার মোঃ শহিদুল হাওলাদারের ছেলে মোঃ সুমন মিয়া (২৪) কর্তৃক আশুলিয়ায় শ্রমিক নেতা সারোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেছেন আশুলিয়া থানায়। সেই সাথে ভুক্তভোগীগণ এ ব্যাপারে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
বুধবার (১৫ মার্চ ২০২৩ইং) রাত ১০টায় পোশাক শ্রমিক মোঃ সুমন মিয়া (২৪), আশুলিয়া থানায় অভিযোগ ও সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার কদমতলী এলাকায়, বর্তমানে সাং-মধ্য গাজীরচট মাটির মসজিদ লিটন এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা। আশুলিয়া থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মোঃ সারোয়ার হোসেন (৪৫), বর্তমান সাং-পরিচালক, আশুলিয়া গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, আশুলিয়া, ঢাকা। ২। মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), ৩। ইমন (৩৫) সহ বর্তমান সর্ব সাং-সদস্য গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, থানা আশুলিয়া জেলা ঢাকা গনের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, আমি বর্তমান ঠিকানার বাসায় ভাড়া থাকিয়া আশুলিয়া থানাধীন শিমুলতলা মীরবাড়ী সাকিনস্থ স্টেরী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করিতাম। ইতিমধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানন্তর হওয়ায় ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনাধী বুঝাইয়া দিতে দেরী করে। বিবাদীগন আমার সহিত যোগাযোগ করে যে, তাহারা উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট আমার পাওনা টাকা পয়সা উঠাইয়া দিবে। আমি বিবাদীদের সহায়তা নেয় নাই এবং কোনো প্রকার যোগাযোগও করি নাই। গত ১১/০৩/২০২৩ইং তারিখ বিকেল ৪টার দিকে উক্ত প্রতিষ্ঠান আমার পাওনা ২১,৭০০/টাকা বুঝাইয়া দেয়। একই তারিখ বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে আমি টাকা নিয়া উক্ত প্রতিষ্ঠান হইতে বাহির হইয়া মীরবাড়ী তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছাইলে বিবাদীগন আমাকে রাস্তার মধ্যে দাঁড় করিয়া ১নং বিবাদী আমার দেহ তল্লাশী করিয়া আমার পরিহিত জিন্স প্যান্টের ডান পকেটে বেতনের উল্লেখিত টাকাসহ সর্বমোট ২৪,৯০০/টাকা নিয়া যায়। এ সময় বিবাদীগনকে টাকা দিতে অস্বীকার করিলে বিবাদীগন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে। বিবাদীগন খুব খারাপ প্রকৃতির লোক, তাহারা পরস্পর যোগ-সাজশে বর্ণিত ঘটনা ঘটাইয়াছে, আমি সঠিক বিচার চাই।
অন্যদিকে আরো এক ভুক্তভোগী মোঃ শেখ স্বপন বলেন, আমি বর্তমান আশুলিয়ার জামগড়া মীরবাড়ী আমিন মীরের বাড়ির ভাড়াটিয়া, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা। আমি আশুলিয়া থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মোঃ ছারোয়ার (৫৫), ২। জাহাঙ্গীর (২৮), বিবাদীগণ শ্রমিক ফেডারেশনের লোক। আমাদের ফ্যাক্টরী স্থানন্তর ও শ্রমিক ছাটাই নিয়া সামান্য সমস্যা হয়, যাহা আমরা নিজেরা মিট করিয়া নিই কিন্তু উক্ত বিবাদীগন গত ১১/০৩/২০২৩ইং তারিখ বেলা ৩টার দিকে আমাদের ফ্যাক্টরীতে যাইয়া আমাদের সাথে কথা বলে, আমি তাদেরকে জানাই কোনো সমস্যা নাই। তাহার পরও তাহারা সমস্যা মিট করার কথা বলে প্রতিটি শ্রমিকের নিকট হইতে ১০০০/ টাকা করিয়ে তুলতে বলেন, আমি রাজি না হওয়ায় তখন আমার সাথে তারা খারাপ আচরণসহ আমাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে। আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। বিবাদীগন আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি করিতে পারে বলে এই অসহায় শ্রমিক বিচার চেয়ে উক্ত বিষয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উক্ত ঘটনায় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ দেলোয়ার মীরের ছেলে সাহেদ মীর বলেন, আমার বাবা দেলোয়ার মীর একজন ভালো মানুষ, তাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমি তাদেরকে সাবধান করছি, কোনো সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা থেকে বিরত থাকবেন। সাহেদ মীর আরো বলেন, আমাদের এলাকায় সারোয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক নেতা প্রকাশ্যে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করছে এমন অভিযোগ পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে অনেকগুলো টাকা, এর চিত্র সংরক্ষণ আছে। সেখানে পুলিশ, সাংবাদিক ও শত শত শ্রমিক হড্ডগোল করেছে, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সারোয়ারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলে কোনো সমস্যা নাই, বিষয়টি আমি দেখবো। এরপর আমি সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের মীরবাড়ীর সম্মানহানী করে আমার বাবার বিরুদ্ধে সারোয়ার ও তার লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সাংবাদিক সম্মেলন করার মাধ্যমে জানাতে চাই যে, আমরা স্থানীয় মীরবাড়ীর কেউ ছিনতাইকারী বা চাঁদাবাজ না, আমি বা আমরা আপনাদেরকে সাবধান করছি, প্রমান ছাড়া কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ বা অপপ্রচার করবেন না, তা নাহলে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো, প্রয়োজনে কঠোরহস্তে কঠিনভাবে বিষয়টি দেখা হবে।
এ ব্যাপারে বিবাদী-শ্রমিক নেতা সারোয়ার হোসেন তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় প্রতিবাদী ঝাড়– মিছিলের সিদ্ধন্ত: শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধিদের কটাক্ষ, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সোসাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে আশুলিয়া শিল্পা লে শ্রমিক অসন্তোষের পায়তারার মূল হোতা দেলোয়ার মীরের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
আশুলিয়ার জামগড়ার মীরবাড়ী এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মীর সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, শ্রমিক নেতা সারোয়ার হোসেনের সাথে আমার কোনো শক্রতা নাই, তিনি কেন আমার বিরুদ্ধে অসম্মানজনক ভাবে খারাপ ভাষা ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি জানিনা, তবে তিনি যে, আমার বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী জানিয়েছেন আমার অপরাধটা কি তা প্রমান করতে ব্যর্থ হলে আমি এর জবাব দিবো এবং আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আমরা স্থানীয় মীরবাড়ীর সন্তান, আমাদের বাবা, দাদার অনেক অর্থ সম্পদ আছে, আমরা ছিনতাইকারী বা চাঁদাবাজ না, আপনি সারোয়ার যে, বড় চাঁদাবাজ তার প্রমান রয়েছে অনেকের কাছে, আমি বলছি, আপনি সাবধান হোন, তা নাহলে কার শাস্তি কে ভোগ করে দেখবেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ, র‌্যাব ও সাংবাদিকগণ আপনারা তদন্ত করে দেখেন আসল চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী কারা?। আমি উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সেই সাথে আরও বলছি, কেউ যেন কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করি।
উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানার (এসআই) সুব্রত রায় বলেন, আশুলিয়া থানায় শ্রমিক নেতা সারোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও জিডি দায়ের করেছেন পোশাক শ্রমিক ভুক্তভোগীগণ, উক্ত বিবাদী সারোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান। এ ব্যাপারে পুলিশ ও র‌্যাব জানান, অপরাধী সে যেই হোক না কেন তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *