মোহাম্মদ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
‘চাকরি নয়, সেবা’- এই শ্লোগানে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে পঞ্চগড়ে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৩৮ জন। এই চাকরি পেতে একেক জনের খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুস ছাড়া পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের এসব তরুণ-তরুণী।
বুধবার (১৫ মার্চ) রাতে পঞ্চগড় পুলিশ লাইন ড্রিল শেডে পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে ৩২ জন ছেলে এবং ৬ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেলা পুলিশ।
এমন স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিনামূল্যে চাকরি পেয়ে উচ্ছসিত হত-দরিদ্র পরিবারের ছেলে মর্শিদুল ইসলাম। তিনি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের জমভিটা এলাকার রফিজুল ইসলামের ছেলে।
অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা দিনমুজুরের কাজ করে আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা শিখিয়েছে। এখন তার বয়স হয়েছে, আগের মত কাজ করতে পারেনা। টিউশনি করিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছিলাম, কিন্তু পরিবারের হাল ধরার অবস্থা ছিলোনা। আজকে আমি সরকারি চাকরি পেয়েছি, আমি মনে করছি আমার নড়বড়ে পরিবারের একটা খুটি মজবুত হলো। বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি আজকে থেকে পুলিশ সদস্য। কখনো ভাবিনি ঘুস ছাড়াই এমন সোনার হরিণ ধরা দিবে।’ স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার যোগ্যতার মূল্যায়ণ করার জন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সুমাইয়া ইসলাম আর্নিকা। তিনি সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জুগিভিটা এলাকার আমিনুর ইসলামের মেয়ে।
দরিদ্র বাবার এই মেয়ে বিশ্বাসই করতে পারছেনা সে আজকে থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য। আনন্দে আত্মহারা আর্নিকা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। আবেগাপ্লুত হয়ে নিয়োগ বোর্ডে থাকা সকল অফিসারকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, কাজ করতে চাই দেশমাতৃকার জন্য।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- নিয়োগ বোর্ডের সদস্য দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লা-আল-মাসুম, ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এবং পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস. এম সফিকুল ইসলামসহ জেলা পুলিশেরর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে সাধারণ কোটায় পুরুষ ২৫ জন এবং নারী তিন জন। মুক্তিযুদ্ধে কোটায় পুরুষ ৬ জন এবং নারী দুইজন। পোষ্য কোটায় পুরুষ একজন এবং নারী একজন।
পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহযোগিতায় শতভাগ স্বচ্ছভাবে আমরা ৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছি। এরা প্রত্যেকেই যোগ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। এরা রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেকেই স্মার্ট পুলিশ হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে বলে আশারাখি।’ তিনি সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার আহব্বান জানান।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড় জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ৩৮ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১৩৩০ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এখান থেকে বাদ পড়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩২৬ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৬৮ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা হলে চূড়ান্তভাবে ৩৮ জনকে মনোনীত করে নিয়োগ বোর্ড।