সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হলে প্রতিদিন অন্তত একটি ফল খেতেই হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা আমরা ফলের মাধ্যমেই অনেকটা পূরণ করি। মৌসুমি, দেশি ও সহজলভ্য ফল খাওয়াই ভালো। কেননা একেক মৌসুমের ফলের একেক ধরনের উপকারিতা আছে।
চাদঁপুর জেলার মতলব উত্তরে অনাবাদি জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে উঠছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় দরিদ্র কৃষকরা। ফলে কৃষকদের পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে ঠিক একইভাবে উদ্ধৃত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর কৃষি দপ্তর বলছে, পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়তে পরিবারগুলোকে বিনামূল্যে চারা-বীজসহ অন্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা। পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাক সবজির চাষ করছেন তারা। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে সবজি চারা-বীজ পেয়ে কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির উঠান ও আশপাশের খালি জায়গায় সবজি চাষ করছেন। বাজারে ফল ও সবজি বিক্রি করেও তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে উপজেলয় প্রায় ২১.০৪৫ বিঘা পতিত জমিকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী, মতলব উত্তরে ৪৬৩টি পরিবার সরকারের কারিগরি সহযোগিতায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। তারা প্রত্যেকেই ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাটা, ধনিয়া ও ঘিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজির বীজ-চারা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বাগানের মাটি উর্বর আর ফলনে পোকা দমনে ৫ কেজি ইউরিয়া, জৈবসার ২০ কেজি, ১টি ঝাঁঝর, বীজ সংরক্ষণের পাত্রের পাশাপাশি ঘেরাবেড়ার জন্য একটি নেট এবং এ ছাড়াও ২০ প্রকার বীজ, ৬টি গাছের চারা দেওয়া হয়।
মতলব উত্তর উপজেলার ব্রাহ্মণচক এলাকার বাসিন্দা মো. এছাক প্রধান তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। মো. এছাক প্রধান বলেন, কৃষি অফিস থেকে সার, নেট ও ৭ প্রকারের সবজির বীজ দিয়েছেন।
ছেংগারচর পৌরসভার ওঠারচর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আতাউর মিয়া জানান, বাড়ির পাশে কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করেছি।
সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকী গ্রামের আরেক বাসিন্দা বাড়ির পেছনের ডোবা ভরাট করে চলতি বছর জমিতে সবজি চাষ করে ২০ হাজাট টাকা আয় করেছেন। আব্দুল হক জানান রফিক ভাইয়ের বাড়ির পেছনে প্রায় ৩০ শতাংশ জমি পতিত ছিল। তিনি উন্নত জাতের কলা গাছ লাগিয়ে এবং কলা বিক্রি করে ভালোভাবে সংসার পরিচালনা করেন।
মতলব উত্তর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সরকারি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। ৪৬৩ কিষান-কিষানি পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ-সার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের মধ্যে আম, পেয়ারা, আমড়া, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের চারা দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ফল ও সবজি চাষে সমস্যার মুখোমুখি হলে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি আমরা।