কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পাননি ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিকরা। অভিযোগ রয়েছে, তালিকা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের গড়ি-মসি এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এসব খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝে।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি প্লাস) প্রকল্পে ৫ হাজার ৭১ জন শ্রমিক বাছাই করা হয়। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। ইউপি চেয়ারম্যানদের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যগণ প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
একাধিক সূত্র জানায়, দৈনিক ৪০০টাকা মজুরিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দফায় ১১০দিন কাজ করার কথা থাকলেও তা করা হয় ৭৭ দিন। আবার কোন ইউনিয়নে এর কম-বেশিও হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা মজুরি পান মাত্র ৪৬ দিনের ১৮ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও বাকি টাকা পাননি তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সাহেবের আলগা
ইউনিয়নে ইজিপিপি প্লাস প্রকল্পে ৭৪০ জন শ্রমিক ৭৭ দিন কাজ করলেও মজুরি পান ৪৬ দিনের। প্রত্যেক শ্রমিকের ১২ হাজার ৪০০ টাকা করে এখনও বকেয়া রয়েছে।
হাতিয়া ইউনিয়নে ৩৯০ জন শ্রমিক ৭২ দিন কাজ করলেও ৪৬ দিনের ১৮ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি পান তারা। ফলে ৩৯০ জন শ্রমিকের ৪০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বকেয়া। বজরা ইউনিয়নে ৪৩৬ জন শ্রমিক ৭৬ দিন কাজ করলেও মজুরি পান মাত্র ৪৬ দিনের। প্রত্যেক শ্রমিককে ১৮ হাজার ৪০০টাকা করে দেওয়া হলেও তাদের বকেয়া রয়েছে ৫২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। দুর্গাপুর ইউনিয়নে ৬৯ দিন কাজ করেন ৩৯৪ জন শ্রমিক। প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি ২৭ হাজার ৬০০ টাকা হলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ১৮ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হয়। বাকি ৯ হাজার ২০০ টাকা করে পাননি শ্রমিকরা। একই অবস্থা উপজেলার সব ইউনিয়নে। এ অবস্থায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মাঝে।
ধামশ্রেনী ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার নুরুল হক জানান, আমরা দুই দফায় ৯০ দিন কাজ করেছি। ৪০০ টাকা মজুরি হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা, কিন্ত মোবাইলে ১৮ হাজার ৪০০ টাকা পেয়েছি। বাকি ১৭ হাজার ৬০০ টাকা এখনও পাইনি। আমেনা ও হাবলু নামের দুই শ্রমিক এক টাকাও পাননি বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানগণ শ্রমিক যাচাই-বাছাই ও সময় মতো অনলাইনে নাম এন্ট্রি না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অর্থ বছর শেষ হওয়ায় শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তবে বিষয়টি খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে কি কারণে এমন হল। ইউপি সচিবদের নিয়ে মিটিং করছি, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা না হয়।