কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাড়াটিয়া সেজে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করেন পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এক বাড়িতে অবস্থান করে গত মে মাসে ওই বাড়ির আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন প্রয়োজনী জিনিস পত্র চুরি করে পালিয়ে যান রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এরপর ওই মাসের ২৬ তারিখ চিলমারী মডেল থানায় বাড়ির মালিক মোছা. রুবাইনা খাতুন বাদি হয়ে রাজু আহমেদের নামে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-১৩।
দীর্ঘ দিন পলাতক থাকার পর গতকাল অভিযুক্ত আসামী রাজু আহমেদকে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বর্ডার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে চিলমারী মডেল থানায় আনা হয়েছে। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. হারেসুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার রাজু আহমেদ নওগাঁ সদর উপজেলার আনন্দনগর এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।
এ ঘটনার রাজু আহমেদকে আটকের পর চোরাই জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে চোরাই মালামাল কেনার অভিযোগে আরো দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, সাজু মিয়া (৫০) ও আলম মিয়া (৩৮)। তারা উভয়েই উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের গুরাতি পাড়া বাঁধের মোড় এলাকার বাসিন্দা।
থানা ও অভিযোগ সূত্র বলছে, অভিযোগ কারী রুবাইনা খাতুন চাকরির সুবাদে রংপুরে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি রমনা মডেল ইউনিয়নের বিজয়নগর এলাকায়। গ্রামের বাড়ি গত কয়েকমাস আগে রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেন। রাজু আহমেদ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করতেন বলে জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং বাড়িওয়ালার সাথে আন্তরিকতা গড়ে তোলেন। এরপর একপর্যায়ে বাড়িওলার সরলতার সুযোগ নিয়ে গত মে মাসের ২৬ তারিখ বাড়ির সকল (ক্রোক্রারিজ জাতীয়) মালামাল চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যান।
রুবাইনা খাতুনের ভাই মোখলেছুর রহমান জানান, রাজু আহমেদ আমাদের সাথে খুব ভাল আন্তরিকতা তৈরি করে নিয়েছিল আমরা বুঝতেই পারি নি যে একজন চোর-প্রতারক। আর সে ওই বাড়িতে একায় থাকতো। ওখানে অপর একটি রুমে ক্রোকারীজের অনেক দামি দামি জিনিসপত্র তালাবদ্ধ ছিল। হঠাৎ দেখি রাতে তালা ভেঙে সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে আমার বোন বাদি হয়ে চিলমারী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, মামলার চারমাস পর আসামী গ্রেপ্তার হবে, মালামাল উদ্ধার হবে এটা আমরা কখনোই ভাবিনাই। আমরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ সেই কাজ টাই করেছে আসামী কে আটক করেছে। থানায় আমাদের একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। কোনো পুলিশ কে এককাপ চাও খাওয়াতে হয়নি। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।
ওসি হারেসুল ইসলাম বলেন, আসামী রাজু আহমেদ একজন আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূলহোতা। তার কাজই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে চুরি করা। আমরা অভিযোগের আলোকে আসামীর খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সে একেক সময় একেক জায়গায় থাকে। কোথাও স্থির অবস্থায় থাকতো না। এভাবে দীর্ঘ সময় পর তার স্থির লোকেশন পাওয়া যায়। এরপর এসপি স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। স্যার এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ওনার নির্দেশ মোতাবেক রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলার বর্ডার এলাকা থেকে আসামী রাজু আহমেদ কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এরপর তার তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাতেই বিক্রিত মালামাল উদ্ধার সহ যারা এসব চোরাইমাল কিনেছিল তাদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উলিপুর সার্কেল) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম জানান, চুরির অপরাধে তো একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে যারা চোরাই পন্য কিনেছিলেন তাদেরকেও আটক করা হয়েছে এবং তাদের বাড়ি থেকে মালামাল উদ্ধার করা হয়। তাই যেকোনো কিছু কেনার আগে অবশ্যই দেখে শুনে নিতে হবে। চুরি করাও যেমন অপরাধ, তদ্রুপ চোরাই মালামাল ক্রয় করাটাও অপরাধ।