হেলাল শেখ—বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিশ্ববাজারের সাথে তালমিলিয়ে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, স্বর্ণ পরীক্ষা ও সোনার অলংকার পরিস্কার করতে লাইসেন্সবিহীন এসিড ব্যবহারসহ জমজমাট ভাবে চলছে সোনা বন্দকী অবৈধ সুদের কারবার, প্রশাসনের নিরব ভুমিকা।
গত ৭দিন সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন মার্কেট ও জুয়েলারী দোকানের মালিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ১ভরি ২২ ক্যারেট সোনা বর্তমানে বাংলাদেশে ১লক্ষ ৩ হাজার টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লক্ষ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ‘স্বর্ণের দাম উঠানামা অব্যাহত—বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এ যেন ভেলকিবাজি শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা’। সোনার দাম বাড়ালে দ্রুত বোর্ডে লেখা হয়, আর দাম কমালে তা বোর্ডে লিখতে দুই চারদিন লেগে যায়। এ যেন অন্যরকম এক ভেলকিবাজি। সেই সাথে জুয়েলারি দোকানে স্বর্ণ পরিক্ষার জন্য এসিডের লাইসেন্স না থাকা ও সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এসিড সন্ত্রাস। থেমে নেই সোনা বন্দকী অবৈধ সুদের জমজমাট কারবার।
ব্যবসায়ীদের দাবী—এমন টানা দাম উঠানামা অব্যাহত— দামি এই ধাতুটির। স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে বাড়ছে রুপা ও প্লাটিনামের ধাতুটিও ১৫০০/টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অনেকটা বেড়েছে, প্লাটিনামের দামও কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে স্বর্ণের দোকান বা জুয়েলারীতে ব্যবসায়ীরা সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামত জমজমাট কারবার করছে। সেই সাথে স্বর্ণ পরিক্ষা করার জন্য অবৈধ ভাবে এসিড ব্যবহার করছে, বেশিরভাগ জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের এসিড ব্যবহারিক লাইসেন্স নেই আর সচেতনতার অভাবে এসিড সন্ত্রাস বেড়েছে, এসিড নিক্ষেপ করে অনেক মানুষের জীবন ধ্বংস করছে এসিড সন্ত্রাসীরা।
উল্লেখ্য গত ০২/০১২/২০২০ইং রাত ১০ টা ৫মিনিটের দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়ার জামগড়া শিমুলতলা নামক স্থানে স্থানীয় রোমান ভুইয়া’র মসজিদের পার্শ্বে রাস্তার উপর পৌছাইলে মোছাঃ রিমা আকতার (১৯), এর শরীর লক্ষ্য করিয়া এসিড নিক্ষেপ করায় তার মুখে ও শরীরে লাগিয়া মুখমন্ডলসহ বিভিন্ন স্থানে তার ঝলসিয়া গিয়েছে। স্থানীয়রা তার গুরুত্বর জখম ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জামগড়া বেরণ সরকার মার্কেট নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করেন, এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এসময় এসিড নিক্ষেপকারী মোঃ রঞ্জু (৩২) কে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। এসিড নিক্ষেপকারী রঞ্জু জামালপুর মেলান্দহ গ্রামের মৃত ছামাদ মিয়ার ছেলে।
অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা চরফ্যাশন থানার সালমা আক্তার মুন্নি (১৮), এক কলেজ ছাত্রীর উপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চরফ্যাশন থানায় মামলা হয়েছে। সারাদেশে এরকম অনেক এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে, ‘এই এসিড সংগ্রহ করা হচ্ছে স্বর্ণের দোকান ও ব্যাটারির কারখানা থেকে।’ তথ্যসূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ পরিক্ষা করতে প্রতিটি স্বর্ণের দোকানে এসিড ব্যবহার করা হয় কিন্তু ব্যবহারিক লাইসেন্স নেই ৯৮% দোকানের।
এসিডের বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ী মুখখুলছেন না, তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরো হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলে অনেকেই জানান। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দায়িত্বশীলরা। এর আগে উক্ত বিষয়ে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম উঠানামা অব্যাহত আছে আমরা দেখছি, গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম উচ্চমুখী। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আমরাও স্বর্ণের দাম কমাবো।
তথ্যমতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ২১ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লক্ষ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেকেই হয়ত জানেন না যে, স্বর্ণ ৬ রতিতে ১ আনা, ১৬ আনা=৯৬ রতিতে এক ভরি হয়।
জুয়েলার্স দোকানে এসিড ব্যবহার করা ছাড়া কোনো স্বর্ণ পরিক্ষা করা যায় না কিন্তু এসিড ব্যবহারকারীদের ডিসি অফিসের জিএম শাখা থেকে লাইসেন্স করতে হয় আর সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা অবাধে এসিড ব্যবহার করছে। তাদের কাছ থেকে এসিড সন্ত্রাসীরা এসিড সংগ্রহ করে মানুষের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে বলে অনেকেই জানান। সচেতনতার অভাব ও ভুলের কারণে দেশে এসিড সন্ত্রাস বাড়ছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। অনেকেই জানান, যেখানে—সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো স্বর্ণের দোকান জুয়েলারি হয়েছে। তারা নিজেদের নিয়মেই স্বর্ণের মধ্যে খাইদ তামা মিশিয়ে বিক্রি করছে, তারা সমিতি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমজমাট ভাবে অনেকেই বন্দকী সুদের জমজমাট ব্যবসা করছে। তালিকা করে সরকারি নিয়ম মানাসহ অবৈধ সোনা ব্যবসায়ী ও লাইসেন্সবিহীন এসিড ব্যবহারকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। পর্ব—১।