কুড়িগ্রামে বোরো চারার বাজার জমজমাট, উপচে পড়া ভিড়
Reporter Name
-
Update Time :
রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
-
১৬৮
Time View
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বোরো চারার বাজার জমজমাট। গ্রামীণ বাজার গুলোতে বোরো ধানের চারা বেচা-কেনায় উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। বোরো চাষের মৌসুম চলে আসায় গ্রামীণ বাজার গুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চারা কিনতে ভিড় করছেন। তীব্র শীত থাকায় বোরো ধানের কিছু কিছু বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বাজারে চারার চাহিদা অনেক বেশি। তবে নিজের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত থাকা বোরোর চারা নিয়ে আসেন বাজারে বিক্রি করতে। ক্রেতারা তাদের চাহিদা মোতাবেক চারা ক্রয় করে নিয়ে তা জমিতে রোপন করছেন। এবছর বাজারে বোরোর চারার চাহিদা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে বোরোর বীজতলা তৈরির লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৩১৫ হেক্টর। যা দিয়ে ২৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করা যাবে। এদিকে বোরো রোপনের লক্ষ্য মাত্রা ২২ হাজার ৫ ‘শ ১০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৮ হাজার ২০৫ হেক্টর, উপসী ১৪ হাজার ১৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ১৪০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫ শত ৬ মেট্রিকটন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বোরোর প্রদর্শনীও রয়েছে। প্রদর্শনী প্রতি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রনোদনা হিসাবে বিনামূল্যে বোরো ধানের উফসি ও হাইব্রীড জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বোরো রোপন চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার গ্রামীণ বাজার গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের চারা বেচা-কেনা জমজমাট ভাবে শুরু হয়েছে। উপচে পড়া ভীড় ক্রেতা বিক্রেতার। বেচা-কেনার দৃশ্য দেখে মনে হয় বোরো চাষিদের এক মিলন মেলা। কেউ দরদাম করছেন কেউ ক্রয় করছেন। বোরো চাষিরা বলেন এবারে তীব্র শীতের দাপট থাকায় কিছু কিছু বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চারার সংকট দেখা দিয়েছে। আবার অনেকে বীজতলা তৈরি না করায় বাজারে আসছেন বোরোর চারা ক্রয় করতে। গ্রামীণ বাজার গুলোতে প্রতিদিন দুপুর থেকেই হাট শুরু হয়। কৃষকেরা তাদের নিজেদের তৈরী বীজতলা থেকে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর মৌসুমী ধানের চারার আটি বেঁধে হাটে নিয়ে আসেন। প্রতি আটি প্রকারভেদে ৭ টাকা থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার পোন হিসাবে (৮০টি আটি) ৪’শ টাকা থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। গ্রামীণ বাজার গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী বোরো চারা পেয়ে বেশ খুশি ক্রেতারা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ১০ শতক জমির জন্য চারা কিনতে বাজারে এসেছি। প্রায় ১ পোন চারা ৫’শ টাকা দিয়ে ক্রয় করলাম। আশা করি এ চারা দিয়ে ভালোভাবে জমিতে চারা রোপন করতে পারব। এ বছর বোরো চারার দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। এবারে বোরো চাষে অনেক খরচ হবে। আশানুরূপ ফলন ও দাম না পেলে ক্ষতির মুখে পরে যাবে কৃষকেরা বলে জানান তিনি।
কিশোরপুর এলাকার বোরো চারা বিক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, আমি প্রায় ২ একর জমিতে বোরো ধানের চারা লাগিয়েছি। বীজতলায় অতিরিক্ত চারা থাকায় তা বাজারে নিয়ে এসেছি। চারার অনেক চাহিদা থাকায় ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন আমি ৩ পোন চারা বাজারে এনে প্রায় ১৫’শ টাকা বিক্রি করেছি।
উপজেলার থেতরাই বাজারের হাট ইজারাদার বাবুল মিয়া বলেন, বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হচ্ছে। এখানে বেশ কয়েকদিন থেকে চারার বাজার জমজমাট ভাবে চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক লোক চারা ক্রয় করতে এখানে আসেন। সুলভ মূল্যে চারা কেনা-বেচা হয়ে থাকে। চারা কেনা-বেচা আর ১৫ থেকে ২০ দিন চলবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, এখন বোরো রোপনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি না করায় তারা বাজারে বোরো চারা ক্রয় করে তা জমিতে রোপন করছেন। আবার কেউ কেউ বীজতলা দেরিতে তৈরি করায় ঐ চারা দিয়ে রোপন করতে দেরি হবার শঙ্কায় বাজার থেকে চারা ক্রয় করে তা দিয়ে জমিতে রোপন করছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন এখন পর্যন্ত বোরো রোপন প্রায় ৯০ ভাগ হয়েছে। বাকী ১০ ভাগ কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
More News Of This Category