হেলাল শেখঃ রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ‘ভাই রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নারী—শিশুসহ ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে’, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। এছাড়া কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টরকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এদিকে রেস্টুরেন্টটিতে লাগা ভয়াবহ আগুনে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং) দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হতাহতদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। তবে এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
অন্যদিকে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) ও অতিরিক্ত আইজিপি জনাব হাবিবুর রহমান রাত ১টার পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভবনটির দোতলায় মূলত আগুন লাগে। ভবনটি নিরাপদ ছিলো না, সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল না। ৭ম তলা বিশিষ্ট ভবনটির উপরে চিলেকোঠা ছিলো। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টা ৫০মিনিটের দিকে রেস্টুরেন্টটিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট। পরবর্তীতে ইউনিট বাড়ার পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে ৩ প্লাটন সাধারণ আনসার ছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১ প্লাটন আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এসময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সাধারণ মানুষজনও আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য কাজ করেন। এছাড়াও উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দেন বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরাও। একপর্যায়ে ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত সোয়া ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এ ঘটনায় ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, তবে উক্ত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল থেকে ঘটেছে না কি অন্য কোনকিছু থেকে তা তদন্ত করে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। তথ্যমতে, দেশের বেশিরভাগ শহরে অপরিকল্পিত বাড়ি ঘর নির্মাণ করার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বলে অনেকেই জানান।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা সাভার—আশুলিয়া, ধামরাই, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে পুরাতন সিলিন্ডারের গ্যাস ভরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব সিলিন্ডার বোতল যাচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় মফস্বল এলাকায়। এমনটি নৌ—রুটে লে ও ব্যবহার করা হয় মানুষের মরণ ফাঁদ সিলিন্ডারের গ্যাস। ভয়ংকর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক এলাকায় অকালে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় সিলিন্ডার গ্যাসের বোতলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এর কারণে যতো সমস্যা, ৬০০টাকার সিলিন্ডার গ্যাস ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা বাড়িয়ে যা বর্তমানে ১৫০০/ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ১২ কেজি বোতল ১৫০০/ থেকে ১৫৪০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ যেন ভয়ংকর গ্যাসবাজি—নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পাল্লা দিয়ে বাড়ার সাথে সাথে গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। ধনী কোটিপতি ও নিম্নশ্রেণীর মানুষের সমস্যা না হলেও চাপে রয়েছেন মধ্যবিত্তরা। প্রায় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সাথে সিলিন্ডারের গ্যাসের বোতলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। পুরাতন বোতলের গ্যাস সিলিন্ডার যেন ভয়ংকর বোমা, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই বলে দাবী করেন সচেতন মহল। এইসব পুরাতন বোতলের গ্যাস সিলিন্ডার নিষিদ্ধ তবুও যেখানে—সেখানে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এর কারণে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।