1. admin@sokalerbangla.com : সকালের বাংলা :
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরবাম:
আশুলিয়া সাংবাদিক সমন্বয় ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি’র সভাপতি হেলাল শেখকে প্রাণঢালা অভিনন্দন! বিজিবি ও ছাত্র-জনতার স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার আশুলিয়া সাংবাদিক সমন্বয় ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি’র সভাপতি হেলাল, সাধারণ সম্পাদক খাইরুল  নিরাপদ আশ্রয়ে কেউ আসছেন ত্রাণ নিতে, বুকসমান পানিতে কেউ আসছেন ত্রাণ নিয়ে ডাকাতির ভয়ে ঘর ছাড়ছেন না পানিবন্দিরা লক্ষ্মীপুরে খাল দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান লক্ষ্মীপুরের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে : আন্দালিব পার্থ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্বরণে হাকিমপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন   সিরাজগঞ্জে জিংক সমৃদ্ধ ধান চাষ প্রসারে উত্তরনের পথ বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত  সিরাজগঞ্জে ৯৯০ পিস নেশা জাতীয় ইনজেশকনসহ দুই নারী আটক ! 

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ মার্চ, ২০২৪
  • ১৫২ Time View
বেইলি রোডে আগুন: সাংবাদিক ‘অভিশ্রুতি বৃষ্টি’র লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা চলছে মায়ের আহাজারি
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
ঢাকার বেইলি রোডে আগুনে সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের মৃত্যু হয়। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে বাবা আর কুষ্টিয়ার গ্রামে মায়ের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। নানা জটিলতায় এখনো মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। করা হয়নি বাবার ডিএনএ পরীক্ষা। নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুন ওরফে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাবা সবুজ শেখ শুক্রবার থেকে মরদেহের জন্য অধীর অপেক্ষা করছেন।
শনিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ৪টা। বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। এত মানুষের জটলার মাঝেও কেমন একটা নীরবতা বিরাজ করছে। ঘরের ভেতর থেকে মাঝে মধ্যে বিলাপের সুর ভেসে আসছে। একটু এগিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখা যায় ইডেন কলেজের ‘অভিশ্রুতি বৃষ্টি’ লেখা একটি ক্রেস্ট ও ছবিসংবলিত ‘বৃষ্টি খাতুন’ নামের একটি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বুকে জড়িয়ে আহাজারি করছেন মা বিউটি বেগম।
ছোট মেয়ে বর্ষা ও প্রতিবেশীরা মিলে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। আহাজারি যেন থামছেই না বিউটি বেগমের। তিনি বারবার বলছে আমার মেয়ে ওর নাম বৃষ্টি এই বলে চিৎকার করছেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বিউটি বেগম অভিশ্রুতির লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণও করেন।
অভিশ্রুতি বৃষ্টির বাবা মোবাইল ফেনে বলেন, তার মেয়েকে হিন্দু দাবি করে কালী মন্দিরের পক্ষ থেকে মরদেহের দাবি করা হয়। কিন্তু শুক্রবার আমি আসার পর মেয়ের সকল একাডেমিক কাগজপত্র দেখানোর পর তারা চলে যান। বাবা সবুজ শেখ ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমার ডিএনএ পরীক্ষা করার কথা বলা হলো। পরে তা করা হয়নি। গত রাতে বলা হলো রমনা থানা থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে। এরপর শুক্রবার রাতে থানায় ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। তারা শনিবার সকালে দেবেন বলে জানান। কিন্তু বিকেল পেরিয়ে গেলেও এখনও ক্লিয়ারেন্স বা মরদেহ দেয়নি।
এদিকে কুষ্টিয়ার গ্রামে মা-বোন প্রতিবেশীরাও রয়েছেন বৃষ্টির মরদেহের অপেক্ষায়। মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ। শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার বিকেল অবদি তাদের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভীড় লেগে আছে। জানা গেছে, কুষ্টিয়ার গ্রামের বৃষ্টি খাতুন ঢাকায় গিয়ে হয়েছেন অভিশ্রুতি। তিনি কখনো অভিশ্রুতি শাস্ত্রী কখনো অভিশ্রুতি বনিক নাম ব্যবহার করেছেন। কখনো বাবার প্রকৃত নাম সবুজ শেখ, কখনো আবার অভিরূপ শাস্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে ইডেন কলেজে পড়া বৃষ্টি খাতুনের সকল একাডমিক কাগজে তার ও বামা-মায়ের প্রকৃত নামই ব্যবহার হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর (প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন) মৃত্যুর খবর তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় পৌঁছায় গতকাল শুক্রবার বেলা ২টায়। এর পর থেকেই বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। মৃত্যুর খবর জানার পর দুই দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত লাশ বুঝে না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। শনিবার বিকেলে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।
নিহতের মেজো বোন ঝর্ণা খাতুন বলেন, লাশ বুঝে নিতে ঢাকায় রয়েছেন বাবা শাবলুল আলম সবুজ। বৃষ্টি খাতুন নাকি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দুই নামের জটিলতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে পড়ে আছে বোনের মরদেহ। হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। তাই লাশ নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাবা। ঝর্ণা খাতুন আরও বলেন, ‘অভিশ্রুতি বৃষ্টি নামের একটি ফেসবুকের ফেক আইডি চালাতেন বৃষ্টি। এ ছাড়া সে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে, এমন কিছু এর আগে আমরা জানি নাই। তিন মাস আগেও বাড়ি এসেছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ঢাকায় ছোট চাকরি করে দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করতেন বাবা সবুজ। গত ঈদেও বাড়ি এসেছিলেন বৃষ্টি। সবুজের তিন কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে ঝর্ণা খাতুন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি রাজবাড়ী থেকেই পড়াশোনা করেন। আর ছোট মেয়ে বর্ষা খাতুন মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন।
বৃষ্টির খালা সাবানা খাতুন বলেন, বৃষ্টি কবে থেকে হিন্দু নাম ধরেছে তা জানি না। সে ইসলাম ধর্মের পরিবারের সদস্য। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টির মা বিউটি বেগম বলেন, আমার নিজের সন্তান বৃষ্টি। কোন দত্তক নেওয়া নয়। কিন্তু তারপরও আমরা তার লাশ পাচ্ছি না। তার লাশ আমরা গ্রামের বাড়িতে দাফন করব। ধর্ম পরিবর্তন করে নাম নিয়ে বৃষ্টি যত ভুলই করুক না কেন, আমাদের সন্তান আমরা দাফন করব।
খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, বৃষ্টি খাতুন তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শতভাগ নিশ্চয়তা দেন বৃষ্টি সবুজ-বিউটির সন্তান। অন্য কোথাও থেকে দত্তক নেওয়া নয়। জমির মাষ্টার বলেন, ২০১৫ সালে সে এখান থেকে এসএসসি পাশ করেন। এখানে সকল সচিত্র একাডেমিক রেকর্ডে তার নাম বৃষ্টি খাতুনই দেওয়া আছে। এছাড়াও তার জাতীয় পরিচয়পত্রেও বৃষ্টি খাতুনই দেয়া আছে। এরপর ২০১৭ সালে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি সে  মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতো। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি। তার বাবা সবুজ শেখ ঢাকায় বেসরকারি চাকরি করে। সে তার মেয়ের লাশ আনতে মর্গে গেছে। এলাকা থেকে তার সকল একাডেমিক ও চেয়ারম্যানের সনদপত্র পাঠানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved , sokalerbangla.com
Theme Customized BY LatestNews