1. admin@sokalerbangla.com : সকালের বাংলা :
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরবাম:
২নং গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর অভিষেক। লক্ষ্মীপুরে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপুরে আইনজীবী হত্যা বিক্ষোভ মিছিল লক্ষ্মীপুরে ৮ মাসেই কোরআনে হাফেজ শিশু ওমর রাণীশংকৈলে আমন ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা লক্ষ্মীপুরে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কামাল গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জে মাশরুমের গুরুত্ব ও উৎপাদন কৌশল বিষয়ক কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত  কোডেকের উ‌দ্যোগে কৃষি উপকরণ বিতরণ রতনকান্দি ও বাগবাটি ইউপিতে সঠিকভাবে খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণ জন্য পরিদর্শন করেন,জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা  রাণীশংকৈলে রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরণের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন 

সাভার এখন মৃত্যুপুরী, পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জন, আহত চার শতাধিক!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮৬ Time View

হেলাল শেখঃ ঢাকার উত্তরের তিন থানা এখন মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে। এসব থানায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জন হয়েছে। আহত ৪৫০, গুলিবিদ্ধসহ আহত হাসপাতালে ভর্তি ১৪৪ জন। ঢাকা উত্তরের সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের তিনটি থানা এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

উক্ত অঞ্চলের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬, আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৬, হ্যাপি জেনারেল হসপিটালে ১জন, হাবিব ক্লিনিকে ২ জন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ৪ জনের লাশ পাওয়া যায়।

 

দেখা যায়, চারদিকে উদ্বেগ আর আতঙ্ক। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণহীন। উন্মুক্ত আর বিক্ষিপ্ত জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে আশুলিয়া, ধামরাই ও সাভার মডেল থানা। অবশিষ্ট কিছুই নেই এ সব থানায়।

 

একইসঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ঘর, অফিস ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোতে এখনো জ্বলছে আগুন। সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার পর আন্দোলনরত ছাত্র জনতার ওপর পুলিশের বেপরোয়াভাবে চড়াও হওয়া। সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত এ সময় ৯ জন নিহত হলেও মঙ্গলবার ৬ আগস্ট ২০২৪ইং এই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২ জন।

 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাভার পুলিশ আন্দোলনকারী কয়েকজনকে হত্যা করে তাদের একটি গাড়িতে উঠিয়ে তাদের লাশ জ্বালিয়ে দিয়ে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কয়েকটি পিকআপ ভ্যানে করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জনতা ধাওয়া করলে সাভারের পুলিশ টাউন এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিবর্ষণ করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত হয়। এরপর পুলিশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে সাভার সেনানীবাসের দিকে গেলেও সেখানে আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া দিলে ২০-২২ জন পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে করতে সাভার সেনানিবাসে ঢুকে যায়। এ সময় বেশ কয়েকজন হতাহত হোন। আন্দোলনকারীরা সেখানেও ঢুকে গেলে সেনাবাহিনী মাইকিং করে তাদের বিচার করা হবে বলে সেনানিবাস থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।

 

মঙ্গলবার সকালে তিন পুলিশের লাশ বাইপাইল ব্রিজের নিচে ঝুলানো অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের একজনের পরিচয় পত্রানুযায়ী পাওয়া গেছে, তার নাম এসআই মো. রফিকুল ইসলাম।

 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারীরা থানা ঘেরাও করতে গেলে সাভারে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ৯ জন থেকে বেড়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। একদিনে পুলিশের গুলিতে এতো মানুষের করুণ মৃত্যুর পর বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় চলছে স্বজন হারানোদের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। রাতে একের পর এক জানাজায় শরিক হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে গোটা সাভার ও আশুলিয়া।

 

এখনো বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পড়ে আছে অজ্ঞাতনামা অনেকের লাশ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় লাশগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

 

সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী গণমাধ্যমকে জানান, চিকিৎসা নিতে গিয়ে ওই হাসপাতালেই গুলিবিদ্ধ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই শতাধিক গুলিবিদ্ধকে তারা চিকিৎসা দিয়েছেন। পরিচয়হীন কয়েকজনের লাশ এখনো পড়ে আছে। থানা পুড়িয়ে দেওয়ায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।

 

আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হারুন অর রশীদ জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের লাশ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে অজ্ঞাতনামা একজনের লাশ হাসপাতালে পড়ে আছে। থানায় খবর দেব, সে উপায় নাই। আগুনে থানা পুড়ে ভস্মীভূত। ‘বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে’ পড়ে থাকা এই মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। ১৮ ঘণ্টা ধরে পরে থাকা লাশে পচন ধরেছে, দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।

 

সাভারে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক শেখ কবির জানান, তিনজনের লাশ পড়ে থাকলেও গভীর রাতে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনরা নিয়ে যান।

 

‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে আশুলিয়ার বাইপাইল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার দিকে অগ্রসর হওয়া জনতার স্রোত লক্ষ্য করে চলে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ। রক্তে রঞ্জিত হয় আশুলিয়ার বাইপাইল ও সাভার এলাকা। নির্বিচার গুলিবর্ষণে অলি গলিতে অকাতরে ঢলে পড়তে থাকেন মুক্তিকামী জনতা। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে নিমেষেই চিত্র পাল্টে যায় ঢাকা উত্তরের এসব থানার। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা। নিরাপত্তার সব দায়িত্ব ছেড়ে নিজেদের জীবন নিয়েই সংকটে পড়ে পুলিশ সদস্যরা। বিকেল ৪টার পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ থানা অভিমুখে ছুটতে থাকলে তাদের পেছনে অবস্থান নেয় জনতার স্রোত।

 

এরপর এবার প্রাণ বাঁচাতে শুরু হয় ধামরাই আশুলিয়া ও সাভারের পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ। তরুণী থেকে শিশু এমনকি শিক্ষার্থীরাও গুলিবিদ্ধ হয়ে আসতে থাকেন হাসপাতালে। অনেকে লুটিয়ে পড়েন ঘটনাস্থলেই।

 

আশুলিয়া, ধামরাই ও সাভার মডেল থানায় দেওয়া হয় আগুন। জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থানরত পুলিশরা যখন অসহায় হয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হোন। ততক্ষণে নির্বিচার গুলির নেতৃত্ব এবং নির্দেশ দেওয়া অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা ফোর্সকে বিপদের মধ্যে ফেলে কৌশলে পালিয়ে যান। একপর্যায়ে থানাগুলো ঘিরে ক্ষুব্ধ জনতা হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে হামলা চালানো শুরু করলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে।

 

এভাবে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয় থানা পুলিশের সদস্যদের। জীবন বাঁচাতে জনতার স্রোত লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পুলিশ সদস্যরা সাভার থানা রোড হয়ে ঢাকা – আরিচা মহাসড়ক দিয়ে সাভার সেনানিবাসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ছাত্র জনতা তাদের পিছু নেয়।

 

পুলিশ সদস্যরা সাভার সেনানিবাসে প্রবেশ করলে পিছে ধেয়ে আসা ছাত্র-জনতাকে মুল ফটকে আটকে দেয় সেনা সদস্যরা। এ সময় সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে হ্যান্ড মাইক নিয়ে উপস্থিত ছাত্র জনতা তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, আপনারা শান্ত হোন, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। আপনারা কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। পুলিশ সদস্যরা এসেছে। আমরা তাদের নিরস্ত্র করে আটক করেছি।

 

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, সেনা সদস্যরা আশ্রয় দিলে ‘ঝামেলা’ তৈরি হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এরপরই রাতে বেশ কিছু সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্যে জানা গেছে।

 

অন্যদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর গা ঢাকা দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরাও। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে যান আত্মগোপনে। সাভারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসভবন অফিস ও কার্যালয়ে ঘিরে চলতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতার হামলা।

 

হেমায়েতপুরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমরের বাসা, ঋষিপাড়ায় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের রাজ প্যালেস, ইমান্দিপুরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেলের বাসা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ টিপুর বাড়িতেও আগুন দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।

 

এদিকে সোমবার বেলা ১১টার পর থেকেই হিংস্র হয়ে উঠে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র। এদিন সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন নবীর চোখে ও দেহের বিভিন্ন স্থানে খুব কাছ থেকে গুলি করে সূচনা হয় এই পুলিশের ফায়ারিং।

 

চোখে ও বুকে গুলিবিদ্ধ এই সাংবাদিক জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও গাড়ি থেকে শুনতে পাই, ওখানে কে! পাশে থাকা পুলিশ সদস্য বলেন স্যার সাংবাদিক। তারা বলে ওইটা কেউ গুলি করো। তারপর খুব কাছ থেকে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। মূলত এই ঘটনা থেকে শুরু হয় পুলিশের গুলি করার উন্মাদনা। সাংবাদিক কোনো দলের নয় তবে কেন সাংবাদিকের উপর গুলি করা হলো জাতি জানতে চায়।

 

এদিকে মঙ্গলবার আশুলিয়া থানা এড়িয়াতে বিভিন্ন এলাকায় সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। দোয়া শেষে উপস্থিত লোকজনকে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved , sokalerbangla.com
Theme Customized BY LatestNews