নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় স্বামীর সঙ্গে কথা হবে বলে আর কথা হল না। পরবর্তীতে শুনতে পেলাম মৃত্যুর খবর। বিয়ের মাত্র ৮ মাসেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হলেন আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মুক্তা আক্তার। পৃথিবীতে আসার আগেই বাবা হারিয়েছে হান্নানের সন্তান। অন্য দিকে সন্তানকে হারিয়ে বার বার মায়াকানন কান্না করছে মা রশিদা বেগম ।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের মৃত্যুতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তার পরিবারে। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৮ জুলাই ঢাকার মধ্য বাড্ডা এলাকায় গুলিতে নিহত হন যুবক ২৮ বছর বয়সী আব্দুল হান্নান।
আমিন মিয়া ও রশিদা বেগম দম্পতির ৫ পুত্র ও ১ কন্যার মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল হান্নান।
আব্দুল হান্নান ঢাকার উত্তর বাড্ডায় একটি প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যান হিসেবে কর্ম করতেন। মাত্র ৮ মাস আগে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেছিলেন।
অন্য দিকে হান্নানের সঙ্গে কাটানো ৮ মাসের স্মৃতি নিয়ে কাঁদছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা আক্তার।
মুক্তা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “গুলি লাগার প্রায় ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনে হান্নানের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, এখন দেশের অবস্থা ভালো না; টাকা পাঠানো যাবে না।”
মুক্তা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, “সে বলেছিলো আমার ননদের কাছ থেকে টাকা এনে সংসারের বাজার করতে। পরিস্থিতি ভালো হলে টাকা পাঠাবো। আর বলেছিল, বাসায় গিয়ে কথা বলব। কিন্তু আর কথা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ফোন আসে, আর সে ফোনে আমার স্বামী মারা গেছে বলে জানায়।”
আব্দুল হান্নানের পিতা আমিন মিয়া বলেন, এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে হামলাকারীরা। মাঝখানে পড়ে যায় হান্নানসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি।
আব্দুল হান্নানের মা রশিদা বেগম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে ও গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে আমার ছেলেসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।হাসপাতাল থেকে ছেলের মরদেহ বুঝে পাওয়ার পর হাজীগঞ্জে এনে দাফন করা হয়।
সুমন এক প্রতিবেশী বলেন, হান্নান ধার্মিক মানুষ ছিলেন এবং সততার সঙ্গে জীবন-যাপন করতেন। মৃত্যুর আগে যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল বলেন, হান্নানের এমন মৃত্যু আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। সে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন।