হেলাল শেখঃ ঢাকার “আশুলিয়া ডেথ জোন” ১৬-১৭ বছর ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। দেশের প্রায় ৬৪ জেলার মানুষ কর্মের খোঁজে আশুলিয়ায় আসেন এর কারণ, এখানে ছোট বড় কয়েক হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। বহিরাগতদের আসা যাওয়ার মধ্যে বিভিন্ন থানার তালিকাভুক্ত অপরাধীরা আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। সূত্র জানায়, যেসকল দম্পতিরা পোশাক কারখানায় কাজ করেন তাদের মধ্যে কিছু ছেলে সন্তান লেখাপড়ার সুযোগ নিয়ে স্কুল কলেজে না গিয়ে কিশোর গ্যাং তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। মা বাবা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে কোনো খবর নিতে পারেন না বলে তারা দাবি করেন।
রবিবার (২ মার্চ ২০২৫ইং) পুলিশ জানায়, গত রাতে আশুলিয়ার ভাদাইল ও জামগড়ার মধ্যে রূপায়ন আবাসন-১এর মাঠের ভেতর থেকে ছিনতাইকারী চক্রের ১৭জনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ র্যাবসহ যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান আছে। পুলিশের দাবি-পূর্বের থেকে এখন আশুলিয়ায় খুন, ডাকাতি ও ছিনতাই কমেছে, আগে আশুলিয়ায় যেখানে সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষের লাশ পাওয়া যেতো তাই “ডেথ জোন আশুলিয়া” বলতেন অনেকেই। তবে ১৭ বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর আশুলিয়ায় পুলিশকে হত্যা করে ওভারব্রীজে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো যা বাংলাদেশে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি, এমনকি ছাত্র-জনতার অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডে ৬জন শহীদকে পুড়িয়ে গুম করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং আশুলিয়া থানার অস্ত্র লুটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। জীবিত ব্যক্তিকে ৫ আগষ্ট শহীদ বলে হত্যা মামলা হয়, ভুয়া বাদী সায়েব আলী জলিল গং মামলা করে একজন সাংবাদিকসহ অনেক সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে। পৃথক ঘটনায় অস্ত্র ও হত্যা মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে তাকে কেন পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেননি জাতি জানতে চায়। জানা গেছে, এর আগে গত (১৯ এপ্রিল ২০২৩ইং) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এনভয় গার্মেন্টস এর নারী পোশাক শ্রমিক বাসা থেকে কর্মস্থলে ডিউটিতে যাওয়ার সময় জামগড়া নিউ বঙ্গ মার্কেটের পিছনে আসামাত্রই তাকে ছুরি দিয়ে পিছনে কুপিয়ে এবং পেটে ছুরি ঢুকিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে খুনি পালিয়ে যায়। এসময় ভিকটিমকে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। ভিকটিম মিস কুইন (২৫) পিতা মোঃ কুদ্দুস, গ্রাম ফতেপুর, থানা উপজেলা নওগাঁ। আশুলিয়ার জামগড়া চিত্রশাইল এলাকার মোঃ ফিরোজ কবিরের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন তিনি। ভিকটিম এনভয় গার্মেন্টসের সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। ভিকটিমের স্বামী মোঃ আজাদ (৩৫) নেশাখোর হওয়ায় ৬ মাস আগে তাকে ডিভোর্স দেন। এ ঘটনার পর সিসিটিভি দেখে বুঝা যায়, ভিকটিমকে তার সাবেক স্বামী আজাদ তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়েছে। খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ হাসপাতাল থেক ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেন। এ এলাকায় হত্যা ও আত্মহত্যা নতুন কিছু নয়।
গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ইং) ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড জামগড়া উত্তর পাড়া মনির মার্কেট মসজিদের সামনে আবুল হোসেন ওরফে আবু ভুঁইয়া’র ৫ম তলা ভবনের ৩য় তলায় শ্রী বিমল মন্ডল (৫০) কে কাঁচি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত বিমল মন্ডল রাজবাড়ি জেলার পাংশা থানার নওরা বনগ্রাম এলাকার মৃত খিতিস মন্ডলের ছেলে। ভিকটিম তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে কাজ কর্ম করতেন পরিবারের সবাই। নিহতের স্ত্রী ও মেয়ে পোশাক শ্রমিক, বিকেল ৫টার দিকে অফিস ছুটির পর প্রথমে বাসায় আসেন, দরজা বাহির থেকে লাগানো ছিলো, দরজা খুলে বিমল মন্ডলের মেয়ে দেখতে পায় তার বাবা খাঁটের বিছানার উপর পড়ে আছেন মুখের ভেতরে কাঁচি মরদেহ পড়ে আছে। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। রহস্য হলো, এই হত্যাকান্ডের পর ওই বাড়ির মালিক আবু ভুঁইয়া ও তার ছেলে জাহিদ হাসান বাবু (২৫), শুভ হাসান (২৩) বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাদের বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেননি, এমনকি ঘটনাস্থলের ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের হুমকি প্রদান করে মুখ খুলতে দেয়া হয়নি। এরপর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকায় বাড়িওয়ালার বড় ছেলে জাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করেন র্যাব-৪ এর চৌকস একটি দল। একই দিনগত রাতে আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল উত্তর পাড়া মোঃ কাদির হাজীর বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি সুমন (২৩) এর ফাঁসি দেয়া অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
জানা গেছে, এর আগে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ভাদাইল ক্রাইম জোন এলাকার সাদেক হোসেন ভুঁইয়া মেম্বারের বড় ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়ার ভাদাইলের নতুন একটি বাড়ির ৪র্থ তলা ভবনের ২য় তলায় গাড়ি চালক রাকিব হোসেনের স্ত্রী মোছাঃ রিপা আক্তার (১৮) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। স্থানীয় সরকার মার্কেট নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে নিহত রিপা আক্তারের লাশ উদ্ধার করেন আশুলিয়া থানা পুলিশ। এর আগে গত (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং) সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন আবাসন-১ এর ১নং গেটের পাশে কফিল উদ্দিনের ৪র্থ তলার ছাদের সিঁড়ির উপর ঝুলন্ত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানার এসআই রাজু মন্ডল। জানা গেছে, এই বাড়ির মালিক কফিল উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী ঘটনার দিন তার বাবার বাড়ি লালমনিরহাট ছিলেন। এদিকে কফিল উদ্দিন তার বাসায় ২য় তলায় রাতে একা ছিলেন, ৪র্থ তলার ১নং রুমের ভাড়াটিয়া ওই নারীর সাথে ওই বাসার কার কি হয়েছে? তার কারণে ভিকটিম ছাদের সিঁড়ির উপরে ফাঁসির ঘটনা ঘটে। এর আগে ওই নারীর স্বামীসহ একই বাড়ির টিনসেট ঘরের পকেট রুমে ভাড়া ছিলেন। হঠাৎ করে ৪র্থ তলার ১নং রুমে তাদেরকে আশ্রয় দেন বাড়ির মালিক কফিল উদ্দিন। স্থানীয়রা জানান, মেয়েটি কেন ফাঁসি নিবে? কেন তাকে পকেট রুম থেকে ৪র্থ তলায় স্থান পরিবর্তন করা হলো?। পুলিশ ও র্যাব উক্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আশুলিয়া এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ফিটিংবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে অপরাধীরা।