সুন্দরবনকে ঘিরে আলোচনা, বিতর্কের ঝড় বইছে অনেকদিন থেকেই। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিডরে সুন্দরবনের শতকরা ৪০ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অনেক পশু-পাখি প্রাণ হারিয়েছে। তখন প্রচুর গাছপালা নষ্ট এবং ধ্বংস হয়েছে। ২০১৪ সালে তেলবাহী ট্যাংকার সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে গেলে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি তেল শ্যালা নদী দিয়ে সমগ্র সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেমে আসে এক গাঢ় অন্ধকার। সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের জন্য সবচেয়ে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে নির্মিত হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। যাকে সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কয়লা পোড়ানো হবে, সেই কয়লার ছাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বর্জ্য সেখানকার জলাভূমির জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। এ বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে যেসব জাহাজ, নৌযান চলাচল করবে এবং আশপাশে যে শিল্পায়ন হবে তা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই। ফলে সুন্দরবনকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক ও আলোচনা এখনও মুখে মুখে ফিরছে।
বাংলাদেশের দর্শনীয় কিছু জায়গার নাম বলতে গেলে সুন্দরবনের নামটি চলে আসে খুব সহজেই। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য পশু-পাখির অনন্য সাধারণ সমাগম এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি এ বনে রয়েছে অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের নজর কাড়তে বাধ্য। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের মোহনায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা এবং ভারতের কিছু অংশ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে অনন্য অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। বাংলাদেশের ৬০১৭ কিলোমিটার ও ভারতের অংশ মিলিয়ে অবিচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের মধ্যে সুন্দরবন গড়ে উঠলেও দেশ বিভাগের পর তা দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়েছে। যার এক খণ্ড সুন্দরবন বাংলাদেশ অংশে পড়েছে এবং অপর অংশ সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান ভারত অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুন্দরবন এবং সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান আলাদাভাবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্বীকৃতি লাভ করেছে। সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিষয়াবলীর অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের অখণ্ড বনভূমি। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে।
সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। অনেকে মনে করেন, সাগরের বন (সমুদ্রবন) বা এখানকার আদিবাসী চন্দ্র বান্ধে থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে। তবে সর্বাধিক স্বীকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে, সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ ‘সুন্দরী’র নামানুসারে হয়েছে সুন্দরবনের নামকরণ। সুন্দরবনের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, হিমালয়ের ভূমি ক্ষয়জনিত পলি, বালি ও নুড়ি হাজার বছর ধরে বয়ে চলা পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র কর্তৃক উপকূলে চরের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় লবণাক্ত জলের ধারায় সিক্ত হয়েছে এই চর এবং জমা হয়েছে পলি। কালক্রমে সেখানে জন্ম নিয়েছে বিচিত্র জাতের কিছু উদ্ভিদ এবং গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত পানির বন। জলাশয় ও বণ্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ সুন্দরবনে খুব সহজে জরিপ কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবন অঞ্চলের স্বত্বাধিকার গ্রহণ করলে সর্বপ্রথম এর মানচিত্র তৈরি হয়। তখন সুন্দরবনের আয়তন ছিল প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। এরপর ধীরে ধীরে সুন্দরবনের আশপাশে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকলে এর আয়তন ক্রমেই কমতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক এর স্বত্বাধিকার গৃহীত হলে প্রথম জরিপ পরিচালিত হয় ১৮২৯ সালে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং পরের বছর এক দায়দায়িত্ব বন বিভাগের উপর অর্পণ করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনভূমির উদ্ভিদের তুলনায় সুন্দরবনের উদ্ভিদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। কেননা, সুন্দরবনের বুক চিরে শুধু নোনা পানি নয়, ক্ষেত্র বিশেষে প্রবাহিত হয় স্বাদু পানির ধারা। এই বৈশিষ্ট্যই সুন্দরবনকে পৃথক করেছে বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বন থেকে। সুন্দরবনের নামকরণের প্রধান কারণ এর সুন্দরী গাছ। বলাবাহুল্য, সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে সুন্দরী গাছ। এছাড়া গেওয়া, গরান এবং কেওড়া সুন্দরবনের বনজ বৈচিত্র্যের ধারক। এখানকার অধিকাংশ গাছের রঙ সবুজাভ হওয়ায় গোটা সুন্দরবনকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে দেখতে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুন্দরবন দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের ওপর নির্ভরশীল শিল্পকারখানায় কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানি ও মণ্ডের মতো প্রথাগত বনজসম্পদের পাশাপাশি এখান থেকে নিয়মিতভাবেই বিপুল পরিমাণে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার গোলপাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষরাজি পূর্ণ সুন্দরবনের এ ভূমি একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড়-তুফান প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী শক্তি সম্পদের বিপুল আঁধার এবং দারুণ সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র। সুন্দরবন সুরক্ষায় নানা অবহেলা থাকলেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই বনের আর্থিক অবদান বছরে ৫ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। পর্যটন, দুর্যোগ থেকে রক্ষা ও জীবিকার মাধ্যমে এই অবদান রাখছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। যা আমাদের আশাবাদী করেছে স্বাভাবিকভাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (আইএফইএসসিইউ) একটি সমীক্ষা চালায় সুন্দরবনের ওপর। সমীক্ষায় দেখা যায়, সুন্দবন থেকে চার খাতে মোট ২২ ধরনের সেবা মেলে। এর মধ্যে তিন খাতের ওপর জরিপ চালিয়েছে- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং গবেষক-এর দল। তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে বছরে আসে ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৩ মিলিয়ন ডলার। সুন্দরবন থাকার কারণে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন ও সম্পদ বড় ধরনের ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। এই বনের কারণে বছরে ৩ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পায়। জীবিকার মাধ্যমে বছরে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার সমপরিমাণ আর্থিক সম্পদ পাওয়া যায় এই বন থেকে। সুন্দরবন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২২ ধরনের সেবা দিয়ে গেলেও টাকার অংকে এ সেবার মূল্যমান সঠিকভাবে নিরুপণ করা হয়নি এতদিন। যে কারণে সুন্দরবনকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়নি আমাদের অর্থনীতিতে। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদানকে সব সময় অবহেলা করা হয়েছে। সময় ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে জরিপকারী দল বাছাই করা কয়েকটি সেবা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করেছেন, পরিপূর্ণভাবে ধারণা করা যায়। বিশেষ করে কার্বন জমা করার ক্ষেত্রে সুন্দরবনের অনেক বড় অবদান রয়েছে। বন বিভাগের এক গবেষণায় জানা যায়, সুন্দরবন বছরে ১৬ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ধরে রাখে। আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার অনুযায়ী এর মূল্য ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার।
আসলে সুন্দরবন নিয়ে সেভাবে চিন্তাভাবনা, গবেষণা চালানো হয়নি বলে অর্থনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব অনুধাবন সম্ভব হয়নি। মূল্য সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সুন্দরবনের অর্থনৈতিক অবদান নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন প্রশ্নে সুন্দরবনের চেয়ে মংলা বন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা স্থাপন বেশি গুরুত্ব লাভ করেছে। সরকার মনে করছে, এসব খাতে বিনিয়োগ করলে খুব দ্রুতই ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সুন্দরবনের আর্থিক মূল্য জানা থাকলে নীতিনির্ধারকের এর গুরুত্ব বোঝানো সহজ হয়। সুন্দরবনের সার্বিক অর্থমূল্য নিরুপণের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারিভাবে। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই বনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশে পড়েছে। বাকিটা ভারতের অংশে। এই বনে রয়েছে- ৩০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২৫ ধরনের প্রাণী এবং ২৯১ জাতের মাছের আবাসস্থল। ৩৫ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বর্তমানে। এ বিশাল জনগোষ্ঠী বেঁচে আছে এ বনকে ঘিরে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের আগ্রহ এবং চাঞ্চল্য রয়েছে। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। পর্যটনকেন্দ্রের উপযোগিতা থেকেও সুন্দরবনের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন’ এ। এখানে বিদেশি পর্যটকদের সমাগমের ফলে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রাও যোগ হয় আমাদের জাতীয় আয়ের হিসাবে। এটা কোনোভাবে অবহেলার মতো অংক নয় মোটেও।
মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিভিন্ন জীব-জন্তুর পদচারণায় সমৃদ্ধ এ বন পর্যটকদের জন্য আজও এক দুর্দান্ত আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
খুব সহজে এর আহ্বান এড়িয়ে থাকা যায় না। জানা যায়, বন ও বন্য পশু পাখির আকর্ষণ এবং ধর্মীয় উৎসব রাসমেলা ও বন বিবির মেলা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। বছরে সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে আয় হয় ৪১৪ কোটি টাকা। গত ১০০ বছরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ৫০৮টি সাইক্লোন আঘাত হেনেছে। সুন্দরবনের বনাঞ্চল এবং গাছপালা থাকায় উপকূলের জানমাল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। শুধু ২০০৭ সালের সিডরে উপকূলে ৩ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায়। সিডরে উপকূলবর্তী এলাকার জনপদ ধ্বংস হয়েছে। সিডরে ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
সুন্দরবনের অস্তিত্ব না থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বাড়ত। প্রায় ৩৫ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবিকার জন্য পুরোপুরি বা আংশিকভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, সুন্দরবন ও এর আশপাশের পেশাজীবীরা প্রধানত ৮টি পণ্য বন থেকে সংগ্রহ করে জীবিকাণ্ডনির্বাহ করেন। তারা প্রধানত জ্বালানি কাঠ, মধু ও মোম, গোলপাতা, মাছ, চিংড়ি ও চিংড়ি পোনা, কাঁকড়া আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এ সাত পণ্য আহরণের মাধ্যমে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার সমপরিমাণ আর্থিক সম্পদ পাওয়া যায় সুন্দরবন থেকে।
অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে সুন্দরবনকে ঘিরে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম পরিবেশবান্ধব ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা, সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় তহবিল গঠন করা, বনের ওপর নির্ভরতা কমাতে আশপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ গ্রহণ করা, পর্যটনভিত্তিক গ্রাম গড়ে তোলা, তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলা, পর্যটকদের প্রবেশ ফি বাড়ানো, নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া স্পর্শকাতর প্রতিবেশ ও পরিবেশের এলাকাগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা, ধারনের অতিরিক্ত পর্যটক যাতে সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া না হয়, তার ব্যবস্থা করা, কৃত্রিম অবকাঠামো না বানিয়ে বনের আকার বাড়ানো, চিংড়ির ঘের বাড়তে না দেয়া এবং বনাঞ্চল রক্ষায় বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সুন্দরবন নিয়ে কোনো রাজনীতি নয়, আমরা সুন্দরবনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা যথাযথ প্রকাশ ও প্রয়োগ দেখতে চাই। কোনোরকম অবজ্ঞা কিংবা অবহেলা নয়, জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অসামান্য অবদানকে কাজে লাগাতে হবে। সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। সেই এগিয়ে চলায় সুন্দরবন নানাভাবে রসদ জোগাবে- আমাদের প্রত্যাশা।