মারুফ সরকার, প্রতিবেদক : ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে ঠিকাদার ফখরুল ইসলাম থেকে ৫ শতক জমি ক্রয় করে ২৫ শতক জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। দখলকৃত জমি ক্রয়ের শর্তে বায়না হলেও টাকা না দিয়ে ওই জমিতে খামার গড়ে তোলায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করে।
অভিযোগের সূত্রে জানা যায় গত ১৫ জুন, রবিবার রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এসে জমির প্রকৃত মালিককে তার বাড়ির জায়গা ফেরত দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদার ফখরুল ইসলামের ছিল ২০ শতকের বসতভিটা এবং আরও এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ শতক জমি ৩-এর পাতায় দেখুন পাঁচগাছিয়ায় ৫ শতক জায়গা ক্রয়ের বায়না করেছিলেন।সেই বাড়িতে তার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীসহ বসবাস করতেন।
ব্যাংক ঋণ এবং পাওনাদারদের দেনা পরিশোধের জন্য ফখরুল ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন তার এই ভূমি বিক্রি করে দেবেন। নেপালে অবস্থানকালে তার ছেলে আশরাফুল ফেসবুকে ২৫ শতক ভূমি বিক্রির স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাস দেখে সাভারের চাপাইনের জাকির হোসেনের ছেলে ফয়েজ আহমেদ জমিটি দেখে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ফখরুলের স্ত্রী আমেনা বেগম স্বামীর পক্ষে পাঁচ লাখ টাকা শতক হারে এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা দামে ফয়েজের সঙ্গে বায়না করেন। শর্ত ছিল, ফয়েজ ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করবেন এবং অতিরিক্ত টাকাগুলো ধাপে ধাপে নগদ পরিশোধ করবেন। সেই শর্ত মোতাবেক ফখরুল ৫ শতক জমি ফয়েজকে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু সে সেই টাকাও পরিশোধ করেনি। উপরন্তু, ফখরুলের বাড়িতে কয়েকদিন থাকার কথা বলে ২৫ শতক জায়গায় দখল করে সেখানে তার ছেলে ফয়সল ও ফরহাদ গড়ে তোলেন “ফরচুন এগ্রো” নামে একটি খামার।
এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় এলাকাবাসী এবং ফেনী মডেল থানায় মীমাং-সার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও সেই সিদ্ধান্ত মানেননি ফয়েজ। ফলে উপায়ান্তর না দেখে রবিবার এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নিজ ঘর পুনরায় দখলে নেন ফখরুলের পরিবার।
এই বিষয়ে ফখরুলের ছেলে আশরাফুল ইসলাম জানান, বাবার কথামতো আমি জমি বিক্রির জন্য ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। সেই পোস্ট অনুযায়ী ফয়েজ আহমেদ জমিটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে, পাঁচ লাখ টাকা শতক হারে দাম ঠিক হয়। সেই মোতাবেক ৫ শতক জমি রেজিস্ট্রিও নেন। তাদের সহজ-সরল কথায় আমরা বাড়িটি ছেড়ে দিই। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে এবং আমাদের বাকি টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা না করায় বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে এসেছি।
এই বিষয়ে ফখরুলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর ঋণ পরিশোধের জন্য এই বাড়িসহ ২৫ শতক জমি এক কোটি ২৫ লাখ টাকায় ফয়েজ নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রির বায়না করি। এরই মধ্যে ৫ শতক জমি রেজিস্ট্রি নিয়েও পুরো টাকা দেননি ফয়েজ। ফলে একদিকে তিনি বাড়ির দখল নিয়েছেন, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী ফখরুল ইসলাম বলেন,আমরা প্রতারণা শিকার হয়েছি,এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে ও ফেনী মডেল থানায় একাধিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও, ফয়েজ তা বাস্তবায়ন করেননি। ফলে আমরা আর অন্যের বাড়িতে থাকতে পারছিলাম না বিধায় রবিবার রাতে এলাকাবাসীর সহায়তায় নিজের ঘরে প্রবেশ করেছি। প্রবেশ করার পর থেকে ফয়েজ আহমেদ নিজেকে শ্রমিক দলের বড় নেতা দাবী করে বিভিন্ন ভাবে আমার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমি আমার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান,ফখরুলের পরিবারের সাথে ফয়েজ আহমেদের কৌশলে প্রতারণা করেছে।তাদের বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসতবাড়ি ছাড়তে তখন বাধ্য করেছেন। আমরা স্থানীয় লোকজন মিলে ভুক্তভোগী পরিবারের কাগজপত্র দেখে তাদের বসতবাড়িতে তুলে দেই।
এ বিষয়ে ফয়েজের ছেলে ফরহাদ জানান, আমরা ৫ শতক জমি রেজিস্ট্রি করেছি, বাকি টাকাসহ ৫ জুন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল এবং বাকিটা নগদ দেওয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে সেই সময় টাকাটা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ফয়েজ আহমেদের এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তাদের জায়গা তারা ইতিমধ্যে দখল করে রেখেছেন ।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, ফখরুলের কাছ থেকে ২৫ শতক জমি ৫ লাখ টাকা করে ক্রয়ের বায়নাপত্র করেন ফয়েজ। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ফয়েজ জমিটি রেজিস্ট্রি না করেই পুরো ২৫ শতক জায়গা জোরপূর্বক ভোগদখল করে আসছিলেন। ৫ তারিখে তারা ব্যাংকে এবং বাকি টাকা ফখরুলকে নগদ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার কথা থাকলে কিন্তু ফয়েজ আহমেদ তা করেননি,পরবর্তীতে তারা নিজেদের বসতভিটায় নিজেরা উঠে যান।