মারুফ সরকার, স্টাফ রির্পোটার : সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন ।সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মাদক বিরুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে সমগ্র বাংলাদেশে।
তারাই ধারাবাহিকতায় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা জেলা পুলিশ কর্তৃক মাদক উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিল এর ব্যাপারে বিশেষ অভিযান এর ঘোষণা দিলে আমীনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ঢাকা-দক্ষিণ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ শুরু থেকে শাহাবু্দ্দিন কবীর,ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে ও অফিসার ইনচার্জ মামুন-অর রশিদ এর সার্বিক সহযোগীতায় এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে,এসআই (নিঃ) ইমরান হোসেন, এসআই (নিঃ) রিয়াজ মাহমুদ ও এএসআই (নিঃ) আল-আমিন খন্দকার এর সমন্বয়ে একটি চৌকস আভিযানিক দল বড় আকারের মাদক উদ্ধারের লক্ষে কাজ শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগষ্ট ২০২৩ ইং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটিবাজার ইউসিভি ব্যাংক এর সামনে আবস্থানরত মোঃ আলী ও মোঃ হাবিবুল ইসলাম রানা এর হাতে দুটি সন্দেহজনক আটার প্যাকেট তল্লাশীকালে দেখা যায় যে, দুটি প্যাকেটের মধ্যে পৃথক পৃথক ভাবে ৫০০ পুড়িয়া করে সর্বমোট ১০০০ পুড়িয়া (১০০ গ্রাম) হেরোইন রয়েছে। তাদেরকে পৃথক পৃথক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। তারা জানায় কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচরে ০২ টি আলাদা কারখানায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করার পর এভাবে প্যাকেটিং করে ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়। কারখানা থেকে হেরোইন কখনও মসলার প্যাকেটে, কখনো আটার প্যাকেটে যাহা ইলেক্ট্রিক প্যাকেটিং মেশিন দিয়ে মুখ আটকিয়ে ঢাকা সহ কেরাণীগঞ্জের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করে থাকে।
উক্ত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশিদ পিপিএম এর সমন্বয়ে এসআই (নিঃ) ইমরান হোসেনসহ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি আভিযানিক দল আরশিনগরের লেক সিটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসডি মহল এর ৪র্থ তলায় একটি হেরোইন তৈরী,প্যাকেজিং ও বাজারজাতকরনের কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজনদের সাথে নিয়ে কারখানার ভিতরে ঢুকলে ফয়েল পেপারের ৯৮ টি বান্ডিল পাওয়া যায় যাহা দ্বারা হেরোইন এর পুরিয়া বানানো হয়। বিভিন্ন ব্যান্ড এর আটা-ময়দা, হলুদের গুড়া, মরিচের গুড়া এর ১০০০ টি খালি প্যাকেট পাওয়া যায়। মূলত উক্ত খালি প্যাকেটের মধ্যে হেরোইনের পুরিয়া গুলো ঢুকিয়ে ইলেক্ট্রিক মেশিন দ্বারা মুখ আটকিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত অভিনব কায়দায় সুকৌশলে হেরোইন ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে থাকে সংঘবদ্ধ একটি মাদকচক্র ।
উক্ত কারখানা হতে হেরোইন প্রস্তুত ও প্যাকেজিং এর সাথে জড়িত হেলাল ও বিপ্লব কে সর্বমোট প্রায় ১ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও উক্ত কারখানা হতে হেরোইন প্রস্তুত এর বিভিন্ন কম্পোজিশন ব্লেন্ডিং করার জন্য ব্লেন্ডিং মেশিন, ইলেক্ট্রিক প্যাকিং মেশিন, ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন, হেরোইন এর বিভিন্ন কেমিক্সসহ আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ উপস্থিত সাক্ষীদের মোকাবেলায় উদ্ধারকৃত মালামাল জব্দ তালিকামূলে জব্দ করে।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত হেলাল ও বিপ্লব এর দেওয়া তথ্যমতে আটিবাজারের সুজন হাউজিং এর ১০ নাম্বার রোড এর সি-ব্লক এর ভাড়া বাসার নিচতলায় তাদের অপর আরেকটি কারখানা আছে বলে জানা যায়। সঙ্গে সঙ্গে উক্ত কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে বিল্লাল ও শরিফুলকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজত হতে প্রায় ১ কেজি হেরোইন উপস্থিত স্থানীয় জনতার সম্মূখে জব্দ তালিকামূলে উদ্ধার করা হয়।
উক্ত কারখানা থেকেও হেরোইন প্রস্তুত ও বিপনন এর সাথে জড়িত আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন মালামাল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা দীর্ঘদিন ধরে কেরানীগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে অভিনব কায়দায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন আটা-ময়দা ও মসলার প্যাকেটে প্যাকেটিং করে ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল।
আটককৃতরা হল, মোহাম্মদ আলী (২৬), মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম রানা(৩০), মোহাম্মদ হেলাল (৪৫), বিপ্লব (২২), বিল্লাল (২২) ও শরিফুল (২০)।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে হেরোইন প্যাকেট করার সময় একটি কারখানা থেকে আটক করা হয়েছে।সংঘবদ্ধ এই মাদকচক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে ও মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।