বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় শিল্প পুলিশের উপস্থিতিতে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপি’র দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
আহতদের উদ্ধার করে একজনকে আশুলিয়ার বেরন সরকার মার্কেট আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্য আহতদের বাইপাইল বগাবাড়ি এলাকার সাহারা মডার্ন হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তা সংলগ্ন জামগড়া-বাগবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে এই গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
গুলিবিদ্ধরা হলেন-কাপ্তান (১৬) ও মঞ্জু মিয়া (১৮), তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। অপরদিকে মাথায় ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন মোঃ শেখ আবু জাফর। এছাড়া দুই পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে আরো ৭জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় প্রীতি গ্রুপের এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড কারখানার ঝুট ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ছয় রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে কাপ্তান নামের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া মঞ্জু মিয়া নামে গুলিবিদ্ধ আরেকজনকে বাইপাইল বগাবাড়ি এলাকার সাহারা মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী রনি আহমেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে আশুলিয়া থানা তাঁতি দলের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বকুল ভূইয়া ও আশুলিয়া থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ শরীফ চৌধুরীর সক্রিয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় শরীফ চৌধুরীর ক্যাডার শুটার বাপ্পি, ঘাড় কাটা জুয়েল, তানভীর, রিপন, রুহুল ইসলাম মুন্সি ও মাইনুদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য হাতে পিস্তল, হকিস্টিক, বড় ছোড়া নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালায়। অপরদিকে বকুল ভূইয়ার ছেলে রনি ভুঁইয়া ও তাঁর লোকজনকেও পাল্টা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। ঘন্টাব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২ জন গুলিবিদ্ধসহ হামলা এবং ইটের আঘাতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। গুলি ও পাল্টা গুলি বিনিময়ের একটি ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে। এতে বকুল ভুইয়া পক্ষের রনি ভুইয়া ও শরীফ চৌধুরী পক্ষের শুটার বাপ্পিকে গুলি করতে দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রীতি গ্রুপের এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড কারখানার ঝুট ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহবায়ক কবির হোসেন সরকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেয় বিএনপি নেতা বকুল ভুইয়া। গত কয়েকদিন যাবত যুবদল নেতা শরীফ চৌধুরী ওই কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিলো।
রোববার দুপুরের পর থেকে প্রীতি গ্রুপের ওই পোশাক কারখানা থেকে শিল্প পুলিশের সহযোগিতায় ট্রাক বোঝাই করে ঝুট স্থানান্তরের কাজ করছিল বকুল ভুঁইয়ার লোকজন। পরবর্তীতে শরীফ চৌধুরীর লোকজন এসে বাধা দেয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে শরীফ গ্রুপের লোকজন গাড়ি ভর্তি মালামাল আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঘটনাস্থল।
ঘটনাস্থলে থাকা শিল্প পুলিশ-১ এর অফিসার ইনচার্জ ইকবাল হোসেন বলেন, সকালে নিয়মিত টহলের জন্য আমরা ঘটনাস্থলে যাই। রুটিনের অংশ হিসেবেই আমরা সেখানে ডিউটি পালন করেছি।
এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোঃ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ঘটনার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।