হেলাল শেখঃ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার পুলিশ ক্যাম্পের অদূরে টঙ্গাবাড়ির স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবায়দুল তালুকদারের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ৭—৮ জনের এক দল ডাকাত বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। এ সময় কৌশলে ওই ব্যবসায়ীর লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল ও একটি শটগান লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। পৃথক ঘটনা আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া দুর্গাপুর ডিস ব্যবসা দখল করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। একই ইউনিয়নে একদিনে পৃথক দুইটি ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাব—৪, সাভারের নবীনগর ক্যাম্পের সিপিসি—২ এর কোম্পানি কমান্ডার রাকিব সাহেবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগণ।
গত বুধবার (২৫ অক্টোবর ২০২৩ইং) ভোর রাত প্রায় ৩টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার মোঃ ওবায়দুল তালুকদারের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা—১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এর চাচাতো ভাই উক্ত বাড়ির মালিক। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়ায় তিন তলার বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে বাঁশ রেখে ২য় তলার বারান্দায় উঠে ডাকাত দল। ওই বারান্দার ৩ ফুট গ্রিল বাকীটা উন্মুক্ত ডিজাইনের। এর ফলে ডাকাত দল বাঁশের সাহায্যে বারান্দায় উঠে জানালার গ্রিল কেটে ভবনের কক্ষের ভিতরে ঢুকে পড়ে, এরপর ডাকাত দল বাড়িটিতে প্রায় দুই ঘন্টার মতো সময় ধরে অবস্থান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এই ডাকাতির ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো দুরত্বে আশুলিয়া থানার একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। অনেকেই বলেন, আশুলিয়া ইউনিয়নের এক মুক্তিযুদ্ধার বাড়ি ও টঙ্গাবাড়ি, কাঠগড়া, দুর্গাপুর, নয়াপাড়াসহ ৫—৬টি বাড়িতে একই সিস্টেমে পৃথক দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে কিন্তু পুলিশ কোনো ডাকাতকে গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
ঢাকা—১৯ এর সাবেক এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এর চাচাতো ভাই ভুক্তভোগী ওবায়দুল তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ভোর রাতে তিন তলা বাড়ির ২য় তলার খোলা বারান্দায় উঠে তারপর জানালার গ্রিল কেটে ৭ থেকে ৮ সদস্যের অস্ত্রধারী ডাকাত দল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতরা এরপর দুই ও তিন তলার বসবাসকারী সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট শুরু করে। এ সময় ঘরে থাকা নগদ সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি পিস্তল ও একটি শর্টগানসহ মূল্যবান বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। সাভার সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সালাউদ্দিন খান নঈম বলেন, “পুলিশের তৎপরতা যদি যথাযথ থাকে তাহলে অপরাধীরা এমন বড় ধরণের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাওয়ার কথা নয়। যদি ঘটনাটি পুলিশের ক্যাম্পের অদূরে হয়ে থাকে, তাহলে এটা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক।”
আশুলিয়া থানার আশুলিয়া ইউনিয়নের “আশুলিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) আরাফাত উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভোর রাত ৪টা ৩২ মিনিটে থবর পাই। ৪টা ৩৮ মিনিটেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রিল কেটে ডাকাত দল ঢুকেছে। দুইটি লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তিনি আরো বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, আমরা অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। পুলিশ ক্যাম্প থেকে এতো কাছে এই বড় ধরণের ডাকাতি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে একটি টহল টিম ছিল রস্তমপুরে পূজার ডিউটিতে’। অবশ্য কাছাকাছি থানার আরো একটি টহল টিম ছিল কাঠগড়া এলাকায়, তবে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে দুইটি টিম। এরপর একই দিনগত সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাঠগড়া দূর্গাপুর এলাকায় সরকার বাড়ির কাছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা ডিস ব্যবসা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। পৃথক ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো আসামী বা সন্ত্রাসী ডাকাত গ্রেফতার হয়নি। অনেকেই বলছেন যে, আশুলিয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় আতংকের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। গতকাল সন্ধা ৭টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া দুর্গপুর সরকার পাড়া ডিস ব্যবসা দখল করা নিয়ে গুলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হোন মোতালেব সরকারের ছেলে মানিক সরকার (৩০), মৃত ইয়াকুব সরকার সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে মোঃ সাইদুর রহমান সরকার (৪৫), মহিউদ্দিন সরকারের ছেলে শরিফ সরকার (৩৫)। বিপক্ষ মোঃ হেদায়েতউল্লাহ এর ছেলে অসরু ও সালমান, মাসুদ গং। এসব গুলিবিদ্ধ ভিকটিমদেরকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। গত রাতে তাদের অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। এ ঘটনার তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার (এসআই) ফরিদ। তিনি বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা হবে অতি দ্রুত।
অন্যদিকে পুলিশের সামনেই কাঠগড়া জমি দখল করার সময় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় সন্ত্রাসীদের, পুলিশ তাদের কাউকে আটক করেননি বলে অনেকেই জানান। তার আগে ঢাকার আশুলিয়ায় জোরপূর্বক অবৈধভাবে স্যুয়ারেজ নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা—সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয় সন্ত্রাসী ফারুক বাহিনীর মারধরে নারীসহ অন্তত ৭জন আহত হয়। আহতদেরকে উদ্ধার ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান ফারুক আহমেদকে আটক করে। গত ১১ জুলাই ২০২১ইং দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাঘের চালা এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন—কাঠগড়া বাঘের চালা এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে আলী আহম্মেদ মাষ্টার (৬৫), তার ছেলে জিসান (২৭), মোছাঃ পারভীন আক্তার (৫০), মোঃ পাপ্পু (২৬) আসিফ (১৮), সিহাব (২২), কাউসার (২৭), ও মোছাঃ লিপি আক্তার (৩৫)। হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা জানান,আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহীন পালোয়ান কাঠগড়া এলাকায় ৬ হাজার ৪৮০মিটার রাস্তা কর্তন করে নিজ খরচে স্যুয়ারেজ লাইন নিমার্ণের অনুমতি পেয়েছেন সাভার উপজেলা থেকে। ওইদিনই সকালে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাদবর ওই স্যুয়ারেজ লাইন নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন করেন। সেখানে আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমেদ তার নিজের নামে বরাদ্দকৃত ৭০০মিটারের বাইরে এসে অবৈধ ভাবে শাহীন পালোয়ানের নামে অনুমোদন করানো যায়গায় স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ শুরু করেন। পরে এ বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুদিপ কুমার গোপ। এসময় সন্ত্রাসী ফারুক আহমেদ তার লোকজন নিয়ে পুলিশের উপস্থিতেই শাহিন পালোয়ানের লোকজনের উপর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। এর আগেও বিষয়টি থানা পুলিশসহ এলজিআইডি’র উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেইনি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর শাহিন পালোয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার হয়। বর্তমানে ফারুক ও শাহিন মিলে গিয়েছে। বর্তমানে আশুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করলেও অনেকেই মামলা করার সাহস পায় না বলে এলাকাবাসী জানায়।